কেফিয়াহ: এক টুকরো কাপড় কীভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠল?
কেফিয়াহ: এক টুকরো কাপড় কীভাবে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠল?
ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ হল একটি কালো ও সাদা সুতির স্কার্ফ।
গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং পরবর্তীতে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বোমা হামলার কারণে ফিলিস্তিনে মৃত্যু ও ধ্বংসের অনেক গল্প বেরিয়ে এসেছে।
ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে চলছে বিক্ষোভ ও মিছিল।
ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে এসব মিছিলে বিক্ষোভকারীদের ঐতিহ্যবাহী কেফিয়াহ নামক বিশেষ ধরনের স্কার্ফ পরতে দেখা যায়।
ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাতে কেউ এই স্কার্ফটি তাদের গলায় জড়ায়, কেউবা মাথায় বাঁধে।
এই স্কার্ফ অন্যান্য কাপড়ের চাইতে এতটাই আলাদা যে চাইলে এর থেকে নজর সরানো কঠিন।
এ কারণে এই স্কার্ফটির গুরুত্ব সাধারণ সুতির কাপড়ের চাইতে অনেক অনেক বেশি।
বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিদের কাছে কেফিয়াহ হল তাদের সংগ্রাম ও প্রতিরোধের প্রতীক।
এটি এক ধরনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক হাতিয়ার যা গত ১০০ বছরে ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
এমনকি এই স্কার্ফকে ফিলিস্তিনের "বেসরকারি পতাকাও" বলা হয়।
কিন্তু কেফিয়াহ কোথা থেকে এসেছে? এই বিশেষ স্কার্ফের পেছনের গল্প কী? কখন এটি এতটা প্রতীকী হয়ে উঠল এবং আজকেন দিনে এই স্কার্ফ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বেদুইনরা সূর্য থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য কেফিয়াহ ব্যবহার করত।
কেফিয়াহর উদ্ভব
এই পোশাকের উৎপত্তি ঠিক কোথায় তা একদম নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, এই স্কার্ফ ব্যবহারের চর্চা শুরু হয়েছিল খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে ইরাকের কুফা শহর।
সেই শহরের নাম থেকেই স্কার্ফটির নাম হয়ে যায় কেফিয়াহ।
কারও কারও মতে এই স্কার্ফ আরও প্রাচীন আমল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। সম্ভবত ইসলাম বিস্তার লাভের আগেও কেফিয়াহর অস্তিত্ব ছিল।
সত্য যাই হোক না কেন, বাস্তবতা হল সময়ের সাথে সাথে বছরের পর বছর ধরে কেফিয়াহর ব্যবহার বেড়েছে।
তবে এর পেছনের কারণ সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক নয়, বরং বাস্তবিক।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, কৃষক এবং আরব বেদুইনরা (যাযাবর আরব) সূর্যের প্রচণ্ড তাপ, গরম বাতাস, মরুভূমির বালি এবং ঠাণ্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য কেফিয়াহ পরিধান করতেন।
অবশ্য শহরগুলোয় ফিলিস্তিনিদের এই স্কার্ফ তেমনটা পরতে দেখা যায় নি।
শহুরে মানুষেরা আরও বেশি ‘কেতাদুরস্ত ও মার্জিত’ পোশাক পরতে পছন্দ করতেন।
সে সময় শহরে 'ফেজ' নামক লাল রঙের টুপি পরার প্রচলন ছিল, যা কিনা টারবুশ নামেও পরিচিত।
এই টুপিটি কিছুটা ঝুড়ির মতো যার মাঝ বরাবর একটি ট্যাসেল ঝোলানো থাকে।
এই টুপিটি মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের শাসক দ্বিতীয় মাহমুদের শাসনামলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কিন্তু অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ১৯৩০-এর দশকে ফিলিস্তিনি সমাজে কেফিয়াহর একটি আলাদা অর্থ দাঁড়ায়।
তখন থেকে কেফিয়াহর গুরুত্ব বাড়ার সাথে সাথে এর ব্যবহারও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৩৭ সালে ইহুদি অভিবাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ।
১৯৩৬ সালের বিদ্রোহ
১৯৩০-এর দশকে, ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলো ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল।
অটোমান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর লিগ অফ নেশনস ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলের প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্রিটেনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফিলিস্তিন ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে ছিল।
এই সময়কালে,ব্রিটেনের আধিপত্য স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে।
কারণ তাদের ধারণা ছিল যে ব্রিটিশরা ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের রাজনৈতিক আন্দোলন জায়নবাদী বা ইহুদিবাদী প্রকল্পকে সমর্থন করছে।
ইউরোপে যখন ইহুদিদের ওপর অত্যাচার বেড়ে যায়, তখন থেকে বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আসতে শুরু করে এবং বসতি স্থাপন করে।
তখন থেকে ওই অঞ্চলে জাতীয়তাবাদী আরবদের বিদ্রোহ শুরু হয়, যা "মহান আরব বিদ্রোহ" নামে পরিচিত।
এই বিদ্রোহ ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল। এবং এই সময়কালে ওই অঞ্চলে ব্যাপক সংঘাত- সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
ওই সংগ্রামে কেফিয়াহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
ইতিহাসবিদ জেন টাইনান সারা বিশ্বে কেফিয়াহর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তিনি বিবিসি নিউজকে বলেন," ফিলিস্তিনিরা ব্রিটিশদের উপস্থিতির কারণে খুব হতাশ হয়ে পড়ছিল। তখন কারা কারা প্রতিরোধ করছিল তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল না। এতে বিদ্রোহীদের পক্ষে চলাফেরা করা ও তাদের কার্যকলাপ চালানো সহজ হয়ে যায়।"
"তখন থেকে কেফিয়াহ বেশ প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। এবং এই স্কার্ফটি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করার কৌশলের অংশ হয়ে ওঠে,"
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে অনেকে কেফিয়াহ পরিধান করেন।
১৯৩৮ সালে, বিদ্রোহী নেতারা শহরে বসবাসকারী সমস্ত আরবদের কেফিয়াহ পরিধান করার নির্দেশ দেন।
বলা হয় যে, ব্রিটিশরা পরে এই স্কার্ফটি নিয়ে এতটাই বিচলিত হয়েছিল যে তারা কেফিয়াহ নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা তাতে সফল হয়নি।
'আ সোশিও পলিটিকাল হিস্ট্রি অফ কেফিয়াহ'র লেখক অনু লিঙ্গালার মতে, কেফিয়াহ একটি কার্যকর সামরিক কৌশলের অংশ ছিল, কিন্তু এটি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ প্রদর্শনের প্রতীকও হয়ে ওঠে।
তার মতে, "১৯৩৮ সালে এই স্কার্ফটি ফিলিস্তিনি সংস্কৃতিতে গুরুত্ব পেয়েছে। একে ফিলিস্তিনি সংস্কৃতির একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসাবেও বিবেচনা করা হয়।"
"কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ থাকলেও নতুন বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী অভিযানে তারা সব পার্থক্য ভুলে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে।”
জেন টাইনানের মতে, সেই সময় থেকে কেফিয়াহ ফিলিস্তিনিদের অধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ, ন্যায়বিচার, ঐক্য এবং সংহতির একটি দৃশ্যমান প্রতীক হয়ে ওঠে।
“এটা ছিল বিদ্রোহীদের বলার একটা উপায় যে আমরা সবাই তোমাদের সাথে আছি।”
কেফিয়াহ পরা শিশুরা।
কেফিয়াহ কী?
প্রকৃতপক্ষে, কেফিয়াহ বিভিন্ন রঙ এবং ডিজাইনের হয়। এরমধ্যে সাদা-কালো কেফিয়াহ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
এর তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো হল: জলপাই পাতা, লাল রং ও কালো রেখা।
জলপাই পাতা হল ওই অঞ্চলের জলপাই গাছের প্রতীক এবং এই পাতা তাদের জমির সাথে শহরের সংযোগকে প্রতিনিধিত্ব করে।
লাল রঙ ফিলিস্তিনি জেলেদের এবং ভূমধ্যসাগরের সাথে তাদের সংযোগকে প্রতিনিধিত্ব করে।
কালো রেখা ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী অংশীদারদের সাথে ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্য পথের যোগাযোগকে প্রতিনিধিত্ব করে।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সভাপতি এবং পরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতকে কেফিয়াহ ছাড়া খুব কমই দেখা যেত।
কেফিয়াহ কীভাবে বৈশ্বিকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল?
১৯৩০ সালের বিদ্রোহের পর, কেফিয়াহ ফিলিস্তিনিদের জাতিতগ পরিচয়ের একটি অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
ইতিহাসবিদদের মতে, এই আন্দোলন 'নাকবা' অর্থাৎ ‘মহা বিপর্যয়’-এর পরে গতি লাভ করে।
নাকবা সংঘাতের ফলে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। সংঘাত থেকে পালাতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
এর ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে গঠিত হয় ইসরায়েল।
'নাকবা'কে ফিলিস্তিনের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক দিন বলে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু কেফিয়াহ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিকভাবে তেমন একটা পরিচিত হয়ে ওঠেনি।
বৈশ্বিক স্তরে, কেফিয়াহ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ইয়াসির আরাফাতের কারণে। যিনি নিজেই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের মুখ হয়ে উঠেছিলেন।
কেফিয়াহ ছাড়া ইয়াসির আরাফাতের ছবি খুব কমই দেখা যায়।
সিরিয়া, জর্ডান ও লেবাননে যুদ্ধ করার সময়ও তিনি এটি পরেছিলেন।
১৯৭৪ সালে যখন তিনি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সে সময় তিনি কেফিয়াহ পরেছিলেন।
২০ বছর পর যখন তাকে অসলোতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, তখনও তাকে এই স্কার্ফ পরা অবস্থায় দেখা যায়।
জেন টাইনানের মতে, "যেকোনো রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার সময় তিনি কেফিয়াহ পরতেন। তিনি তার ডান কাঁধে এই স্কার্ফটি ত্রিভুজাকার আকৃতিতে বিশেষভাবে ভাজ করতেন যা ১৯৪৮ সালের আগের ফিলিস্তিনের মানচিত্রের মতো মনে হতো।"
লায়লা খালেদের একটি ছবি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
অনু লিঙ্গালার মতে, ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এবং ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির আগ পর্যন্ত যখন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনি পতাকা নিষিদ্ধ করেছিল, তখন কেফিয়াহ'র প্রতীকী গুরুত্ব বেড়ে যায়।
গবেষকরা বলছেন, ছয় দিনের যুদ্ধের পরই জাতীয় প্রতীক হিসেবে কেফিয়াহর গুরুত্ব বাড়ে।
তাদের মতে, "পরবর্তী বছরগুলোয় ফিলিস্তিনিদের সামাজিক পরিচয় এবং তাদের ভূখণ্ডে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হুমকির মুখে পড়েছিল, যা ক্রমে বাড়তে থাকে। পরে কেফিয়াহর মতো সাংস্কৃতিক প্রতীক, তাদের ঐক্য ও আত্ম পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে ওঠে।"
এভাবে, কেফিয়াহ ফিলিস্তিনপন্থী পোস্টার এবং রাজনৈতিক ছবিগুলোয় দেখা যেতে শুরু করে এমনকি নারীরাও এই স্কার্ফটি ব্যবহার করতে শুরু করেন।
পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন-পিএফএলপি সদস্য লায়লা খালেদের একটি ছবি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
ওই ছবিতে তিনি মাথায় কেফিয়াহ পরা ছিলেন এবং তার হাতে ছিল একে ফর্টিসেভেন রাইফেল।
১৯৬৯ সালের এই ছবিটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
খালেদ পরে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন যে, একজন নারী হিসেবে তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে সশস্ত্র সংঘাতে মেয়েরাও পুরুষদের সমান সমান।
তিনি বলেছিলেন "তাই আমরা বাহ্যিকভাব পুরুষদের মতো বেশ ধরতে চেয়েছি"
পিঙ্ক ফ্লয়েড ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সঙ্গীতশিল্পী রজার ওয়াটার্সকে কেফিয়াহ পরা দেখা গিয়েছে।
"ফ্যাশনেবল" পোশাক
জেন টাইনানের মতে, উপরে উল্লেখিত এমন নানা কারণে কেফিয়াহ ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, বিশেষ করে পশ্চিমে এই স্কার্ফটি ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গে পরিণত হয়।
"উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের কারণে কেফিয়াহ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং তারপর এটি খুব আকর্ষণীয় এবং ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গে পরিণত হয়" বলেন, জেন টাইনান।
তার গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে ১৯৭০ এর দশক পর্যন্ত, পশ্চিমের অনেক তরুণ আধিপত্যশীল পুঁজিবাদী সংস্কৃতি এবং ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জানাতে সামরিক ধাঁচের পোশাক পরিধান করতে শুরু করে।
একই উপায়ে কেফিয়াহ মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৯৯০ এর দশকে, বিশ্বের জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বরাও এটি স্কার্ফটি পরতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ইংলিশ ফুটবল খেলোয়াড় ডেভিড বেকহ্যাম এবং ব্রিটিশ রক ব্যান্ড পিঙ্ক ফ্লয়েডের সঙ্গীত শিল্পী রজার ওয়াটার্স।
পরে, আমেরিকান ব্র্যান্ড আরবান আউটফিটার্স সেইসাথে জিভঞ্চে বা ল্যুই ভিটনের মতো বিশ্বখ্যাত ডিজাইনার ফ্যাশন স্টোরগুলো কেফিয়াহ বিক্রি করতে শুরু করে।
এর জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়ে যায় যে এর বেশিরভাগ চীনে উৎপাদন করা শুরু হয়।
ফিলিস্তিনে এখন একটি মাত্র কেফিয়াহ তৈরির কারখানা অবশিষ্ট রয়েছে। এই কারখানাটি ইয়াসির হারবাউই ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা পশ্চিম তীরের হেবরন শহরে অবস্থিত।
কেফিয়াহ ফ্যাশনের একটি অংশ হয়ে উঠলেও এর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কোন অংশে কমেনি।
প্রতিরোধের শক্তি
কেফিয়াহ কিছু সময়ের জন্য ফ্যাশনের একটি অংশ হয়ে উঠলেও ইতিহাসবিদদের মতে, এতে এর রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব কোন অংশে কমেনি।
আজ, গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এর তাৎপর্য আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
এমনকি এই স্কার্ফটি নানা সময়ে বিতর্কের মুখেও পড়েছিল। যার কারণে বিশ্বের কিছু দেশে কেফিয়াহ নিষিদ্ধ করা হয়। যেমন জার্মানির রাজধানী বার্লিনের কিছু স্কুলে কেফিয়াহ পরা নিষিদ্ধ ছিল।
অনু লিঙ্গালার মতে, “ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে কেফিয়াহর গুরুত্ব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং ফিলিস্তিনের সমর্থকরা নীরবে বা জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশে কেফিয়াহ পরিধান করে।”
জেন টাইনানের মতে, "বিশ্বব্যাপী এই কাপড়ের স্কার্ফটি প্রতিটি মানুষের যে আগ্রহ ও উপলব্ধির জন্ম দিয়েছে তা সত্যিই আকর্ষণীয়।"
"এটি খুব অস্বাভাবিক, প্রায় অভূতপূর্ব," পরিশেষে তিনি বলেন।