পরিচ্ছেদঃ ১/১. আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কীভাবে ওয়াহী শুরু হয়েছিল।
وَقَوْلُ اللهِ جَلَّ ذِكْرُهُ (إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَى نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِنْ بَعْدِهِ)
এ মর্মে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ’’নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওয়াহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের (নবীদের) প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/১৬৩)
১. ’আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত। আমি ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে।] (৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিম ২৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮) ( আধুনিক প্রকাশনী- ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১)
باب كَيْفَ كَانَ بَدْءُ الْوَحْىِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ".
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
নিয়ত-এর পরিচয় নিয়ত শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। আর শরীআতের পরিভাষায় নিয়ত বলতে দু'টি জিনিস বুঝায়- (১) অভ্যাস থেকে ইবাদাতকে আলাদা করা; (২) এক ইবাদাত থেকে অন্য ইবাদাতকে আলাদা করা।
হাদীসে উল্লিখিত নিয়তের ওপর নির্ভরশীল, এর অর্থ হচ্ছে- কর্মের সাওয়াব বা শাস্তি নিয়ত অনুসারেই আল্লাহ নির্ধারণ করবেন। সেখানে বাহ্যিক কর্মের ওপর নির্ভর করা হবে না। দুনিয়ার কর্ম এর বিপরীত। সেখানে কেউ নিয়তের কথা বলে পার পেতে পারে না। তাদেরকে অবশ্যই তাদের কর্মের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
মহিলাকে বিবাহ করাও দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, এ হাদীসটির প্রেক্ষাপট। এ হাদীসটির প্রেক্ষাপটের সাথে একজন মহিলা জড়িত ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। যদিও সহীহ কোন বর্ণনা দ্বারা তা সাব্যস্ত হয়নি।
হাদিস থেকে শিক্ষা
১. প্রতিটি কাজের বিশুদ্ধতা, বিনষ্ট হওয়া, পূর্ণতা, অপূর্ণতা, আনুগত্য কিংবা অবাধ্যতা নির্ধারিত হবে নিয়তের ওপর। সুতরাং যদি কেউ লোক দেখানো কিংবা লোক শোনানোর উদ্দেশ্যে আমল করে তবে সে গুনাহগার হবে। যেমন যদি কেউ জিহাদ করে আল্লাহর দীনকে বুলন্দ করার জন্য তবে তার সাওয়াব পূর্ণতা পাবে, আর যদি সে আল্লাহর দীন বুলন্দ করার পাশাপাশি গনীমতের মাল পাওয়ার আশা করে তবে তার সাওয়াব কমে যাবে। আর যদি শুধু গনীমতের আশা করলে সে গনীমতের সম্পদই পাবে, গুনাহ না হলেও মুজাহিদের সাওয়াব পাবে না।
২. কোনো কাজের জন্য নিয়ত বা ইচ্ছা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কিন্তু সেটা মনে মনে স্থির করে নেয়াই যথেষ্ট। এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। বাড়াবাড়ি বলতে এমন করা যে, সেটাকে মুখে আওড়ানো বা বারবার বলা অথবা সে কাজের প্রতিটি অংশের মধ্যে সেটার উপস্থিতি তৈরি করা। এমনটি পরবর্তীতে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণার পর্যায়ে নিয়ে যাবে। কাজটি করার শুরুতে নিয়ত ঠিক করার পর বারবার বলার প্রয়োজন নেই।
৩. নিয়তের স্থান হচ্ছে অন্তর। যদি মুখে উচ্চারণ করা হয় তবে সেটা বিদআত হবে।
৪. লোক দেখানো কিংবা শোনানোর প্রবণতা থেকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ তা ইবাদাত নষ্ট করে দেয়।
৫. অন্তরের আমল বা অন্তরের কাজের ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, তার মাধ্যমেই ইবাদতের শুদ্ধাশুদ্ধি অনেকাংশে নির্ভর করছে।
৬. দ্বীন ও ইসলামের হেফাযতের জন্য অমুসলিম দেশ থেকে মুসলিম দেশে হিজরত করা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ, উত্তম ও উৎকৃষ্ট ইবাদত। তবে শর্ত হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা সংঘটিত হওয়া।
৭. ইবাদত যখন এমন জিনিস হবে যাতে একটি নিয়তই কার্যকর করা যায়, যেমন- সাওম পালন করা, সালাত আদায় করা। এমতাবস্থায় সে কাজের শুরুতে যা নিয়ত করবে তা ই হবে। কিন্তু যে ইবাদতের অংশ ভিন্ন ভিন্ন থাকে, তখন সেটার যে অংশের নিয়ত যা হবে সে অংশের হুকুম তা নির্ধারিত হবে। যেমন- যাকাত প্রদান করা। যখন লোক দেখানোর নিয়ত থাকবে তখন তা রিয়া ও আমল ধ্বংস করবে, আবার যখন সাওয়াবের আশা করবে তখন তা বিশুদ্ধ হবে।